রিয়াজুল হক সাগর,রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
চলতি মৌসুমে আমি চিনা বাদাম চাষ করেছি দেড় বিঘা জমিতে। এখন জমি থেকে ফসল তুলতে শুরু করেছি।ধান চাষে যেমন খরচ, তেমনি রোপনের পর থেকে দুঃচিন্তায় থাকতে হয় কৃষকদের। তবে বাদাম আবাদের পর তা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয় না। প্রতি বিঘায় বাদাম উৎপাদন হয় ৬ থেকে ৭ মণ। প্রতিমণ বাদাম দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হলে মোট বিক্রি ১২ হাজার টাকা। এতে খরচ বাদে লাভ হয় ৬ হাজার টাকা।’ ধান আবাদ করে লাভ তো দূরের কথা খরচের টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হয় বললেন কৃষক মোসলেম উদ্দিন।
গংগাচড়া তিস্তা নদীর জেগে উঠা চরগুলো ঘুরে দেখা গেছে, চরের পর চর জুড়ে চাষ করা হয়েছে বাদামের। প্রায় প্রতিটি চরেই বেশ ভালো ফলন হয়েছে। সঠিক দিক নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষন পেলে চরাঞ্চলে বাদাম চাষে ভাগ্য বদলে যাবে কৃষকদের। বাদাম হয়ে উঠবে চরাঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক ফসল।তিস্তার রুপালী চরে বাদাম চাষ করে ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। শতধিক চরে বাজাম চাষ করা হয়েছে। প্রতিটি চরেই ফলন ভালো হওয়ায় বাদাম নিয়ে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গঙ্গাচড়ায় তিস্তার চরে এ বছর ৩৩৫ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, বাদামগাছের সবুজ রঙে চরের বুক ছেয়ে আছে। যে দিকে চোখ যায় শুধু বাদামখেত। কৃষকেরা গাছের পরিচর্যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ে থাকছেন চরে। খেত পরিচর্যায় নারীশ্রমিকদের কদর বেশি। চাষিরা মনে করছেন, বৈরী আবহাওয়া ও অসময়ে বন্যা না হলে ভালো ফল হবে।
চরে কথা হয় হাফিজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৪ একর জমিতে বাদাম লাগিয়েছি।এই একর জমিতে তার খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকা। বাদামের গাছগুলো বেশ হৃষ্ট-পুষ্ট হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ফলন ভাল হবে। কম করে হলেও বিঘা প্রতি ৯ থেকে ১০ মন বাদাম পাওয়া যাবে। বর্তমানে বাদামের মুল্য ২২’শ থেকে ২৫’শ টাকা। তিনি জানান, অল্প পরিশ্রমে অল্প খরচে বেশ ভালো ফলন পাওয়ায় গত বারের চেয়ে এবছর দ্বিগুণ জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। তার মত আরও অনেকেই এবছর বাদাম চাষ করেছেন। কৃষকদের দাবী, নদী তীরবর্তী এবং চরাঞ্চলের কৃষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া হলে তারা বাদাম চাষে আরও বেশি আগ্রহী এবং পারদর্শী হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফরিদুল হক বলেন, ‘যেহেতু এ উপজেলা নদীমাতৃক, তাই কৃষকেরা যাতে কম সময়ের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক বাদাম চাষিকে ১০ কেজি করে বীজ দেওয়া হয়েছে। আর প্রণোদনা হিসেবে ৮০ জন জন প্রতি কৃষককে ডিএপি ১০ কেজি, সার ৫ কেজি, চিনাবাদাম বীজ ১০ কেজি করে দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply