মোকাররম হোসেন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
এবার বিক্রি হবে ‘দিনাজপুরের রাজা’। তবে এ রাজা কোনো রাজ্যের রাজা নয়। এ হলো আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত বিশাল দেহের একটি ষাঁড়ের নাম ‘দিনাজপুরের রাজা’। সাদা-কালো রঙের সুঠাম স্বাস্থ্যের ষাঁড়টির শরীরের দৈর্ঘ্য ১০ ফুট, উচ্চতা ৬ ফুট। ওজন ৩৫ মণ অথার্ৎ ১৩০০ কেজির উর্দ্ধে। ষাঁড়টির মালিকের আশা, দিনাজপুরের রাজাকে বিক্রি করবেন ১৮ লাখ টাকায়।
দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাবারে নিজের বাড়িতে রাজাসহ ১০টি গরু লালন-পালন করেছেন ফুলবাড়ী ও পার্বতীপুর উপজেলার শেষ সীমানার পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের মধ্যদূর্গাপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। প্রায় সাড়ে ৪ বছর পূর্বে ওই খামারেই ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি থেকে জন্ম নেয় রাজা। হলেষ্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টিকে রাজার মতই লালন পালন করেছেন বলে নাম রেখেছেন ‘দিনাজপুরের রাজা’। বিশাল আকৃতির ষাঁড়টি দেখার জন্য প্রতিদিন শতশত মানুষ ভিড় করছে ওই বাড়িতে। ষাঁড়টি বাড়ি থেকে বের করতে ৪-৫জন মানুষ সামলাতে হয়, হাটে আনা নেওয়া করা কষ্টকর তাই বাড়ি থেকেই রাজাকে বিক্রি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান সৌখিন খামারী রাজ্জাক । রাজার মালিক রাজ্জাক আরও বলেন, জন্মের পর রাজা কে দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে লালন পালন করতে শুরু করেন। খাবারের মধ্যে খড়, ঘাস, ছোলা, মুসুরের ডাল ও ভুষি, ভুট্টার আটা, চোপড়, খুদের ভাত, খৈল, ধানের কুড়া ও চিটা গুড়। এতে প্রতিদিন রাজার খাবারের তালিকায় খরচ হয় ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে তাকে কাচা কলা, গাজর, আপেলসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলও খাওয়ানো হয়। থাকার জায়গায় ২৪ ঘন্টা ৩টি ফ্যান দেয়া রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে হাত পাখা দিয়ে রাজাকে বাতাস করতে হয়। প্রতিদিন ৩/৪ বার গোসল করাতে হয়। প্রয়োজন মতো খাবার ও সঠিক পরিচর্যায় দিনদিন গরুটির আকৃতি এবং ওজন বেড়ে ৪ বছরে বর্তমানে ৩৫ মণের (১৩০০ কেজি) এসে দাঁড়িয়েছে, যা ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে ওজন মাপা হয়েছে। বর্তমানে তার বয়স ৬ দাঁত। এবার কোরবানি উপলক্ষে রাজাকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শৌখিন খামারি আব্দুর রাজ্জাক। তবে ক্রেতা সংকটে ভুগলেও ইতোমধ্যে খুলনা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতার এসে রাজার দাম করছেন। মন মতো দাম না হওয়ায় এখনো অপেক্ষায় আছেন।
বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজার খাবার রাজার মতোই দিতে হয়। প্রতিদিনের যা খরচ হয়, তা আমার সাধ্যে কুলাচ্ছে না তাই এবার কোরবানিতেই বিক্রি করব। রাজ্জাকের দাবি এপর্যন্ত রাজাকে লালন-পালন করতে প্রায় ১৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে এবং দিনাজপুর জেলায় তার গরুটিই সবচেয়ে বড়। তার স্বভাব শান্ত প্রকৃতির হলেও মাঝে মাঝে চড়া হয়ে উঠে।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, সন্তানের মতো রাজাকে লালন-পালন করেছি। পরিবারের সবাই মিলে যত্ন করে ষাঁড়টি বড় করা হয়েছে। এর চালচলন ও সুঠাম স্বাস্থ্য দেখে ষাঁড়টিকে তাঁরা ‘দিনাজপুরে রাজা’ বলে ডাকেন। এদিকে রাজার চিকিৎসাসহ বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের এআই টেকনিশিয়ান মো. জাকারিয়া হোসেন। তিনি বলেন, এটি পশু সম্পদ অধিদপ্তরের ১৬৮ নং প্রুভেন ব্লু’র সিমেনের হলেষ্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। ষাঁড়ের মালিক রাজ্জাক আমার বন্ধু মানুষ, তার গরুর খামারের প্রতি আগ্রহ থাকায় গরু গুলোর জন্য তাকে বিভিন্ন সময় চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।
Leave a Reply