মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
যশোরের অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম কি কারিশমা জানেন? এ প্রশ্ন এখন অভয়নগর উপজেলার সর্বত্র। এমনকি খোদ উপজেলা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাও তুলেছেন এমন প্রশ্ন। এর অন্যতম কারন তার অধিক অভয়নগর প্রিয়তা। কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলছেন অভয়নগর উপজেলায় কি মধু আছে যা শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামকে বারবার টেনে নিয়ে আসে? অভিযোগ রয়েছে, দুই ধাপে চাকরি জীবনের ১০ টি বছর তিনি অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা পদে কাটিয়েছেন। যা সরকারি বদলী বিধিমালার সম্পূর্ণ বিরোধী। তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের বদলী নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিশেষ কায়দায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে অভয়নগর উপজেলায় দুই ধাপে ১০ বছর পার করে চলেছেন এবং এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, অভয়নগর উপজেলায় চাকরি জীবনে ২ ধাপে কাটানো ১০ বছরে এ আসনের দুই জন জাতীয় সংসদ সদস্যেরই আস্থাভাজন ছিলেন শহিদুল ইসলাম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের ও স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, অভয়নগর উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের দুই ধাপে কাটানো ১০ বছর ছিলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের স্বর্ণযুগ। তিনি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দুই এমপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে লুফে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাগেছে, তিনি প্রথম ধাপে ২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন। এবং যোগদানের পরই তিনি জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি শেখ আব্দুল ওহাবের আস্থাভাজন হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে শুরু করেন ব্যাপক নিয়োগ বাণিজ্য। সরকারি কর্মকর্তাদের বদলী আইনে সর্বোচ্চ তিন বছর একজন কর্মকর্তার এক ষ্টেশনে থাকার বিধান থাকলেও তিনি সংশ্লিষ্ট মহলকে ম্যানেজ করে ও সাবেক ওই শীর্ষ জনপ্রতিনিধির আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে টানা প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত করেন অভয়নগর উপজেলায়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারী তাকে অভয়নগর উপজেলা থেকে বদলী করা হয়। অভয়নগর উপজেলা থেকে বদলী হলেও অভয়নগর পিরীতি এবং অভয়নগর উপজেলার বিশেষ মধূর আকর্ষন তিনি ভুলতে পারেন না। যে কারনে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের এমপি পরিবর্তন হয়ে রনজিত কুমার রায় যশোর-৪ আসনের এমপি নির্বাচিত হলে তিনি রনজিত রায়কে ম্যানেজ করে পূণরায় ২০১৯ সালের ১২ মে অভয়নগর থানায় পূণরায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে যোগ দেন। সেই থেকে রনজিত কুমার রায়ের অঅশর্বিাদ পুষ্ট হয়ে ওপেন সিক্রেট নিয়োগ বানিজ্যে নামেন শিক্ষা কর্মকর্তা। সেই থেকে পূণরায় অভয়নগর উপজেলায় তার চাকরিকাল ৫ বছর অতিবাহিত হলেও সরকারি বদলী নীতিমালাকে থোড়াই কেয়ার করে উপরিমহলকে বিশেষ কায়দায় ম্যানেজ করে এখনও বহাল তবিয়তে এ উপজেলায় তার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সদা মিষ্টভাষী, হাস্যোজ্জ্বল মুখ ও নম্রতায় অনন্য অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম তার বাহ্যিক গুণাবলিকে কাজে লাগিয়ে সদ্য পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি রনজিত কুমার রায়ের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে উপজেলা ব্যাপী চালিয়েছেন ওপেন সিক্রেট নিয়োগ বাণিজ্য। কেবল এমপি রনজিত কুমার রায়ই নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক জাতীয় সংসদের হুইপ শেখ আব্দুল ওহাবের আমলেও তিনি তার আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে একইভাবে নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়েছেন। এমন অভিযোগ শিক্ষক সমাজ থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মুখে মুখে। কেবল তাই নয়, স্কুল কলেজে ম্যানেজিং কমিটি গঠন, বেতন ছাড় করানোসহ নানা ছুঁতোয় তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা ব্যাপী তার চাকরি জীবনের ১০ বছরে কয়েকশত নিয়োগ প্রদান করেছেন। টাকা ছাড়া মাধ্যমিক স্কুল বা কলেজে কোন নিয়োগ হয়নি। এমনকি নওয়াপাড়ার কোন কোন স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে গুনতে হয়েছে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকা। অন্যান্য শিক্ষক পদে ১০ থেকে ১২ লক্ষাধিক টাকা। এছাড়া পিয়ন কাম দপ্তরী, কম্পিউটার অপরেটরসহ কর্মচারী পদে নিয়োগ পেতে গুনতে হয়েছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে অভিযোগ করেছেন, এসকল নিয়োগের প্রতিটি থেকে এমপির জন্য বরাদ্দ রাখতে হতো ৫ লাখ টাকা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নামে বরাদ্দ রাখা হতো ৫০ হাজার, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিতে হতো ১ লাখ টাকা। এছাড়া নিয়োগ বোর্ডের প্রধানসহ প্রত্যেককে দেয়া হতো আত্মসাৎকৃত টাকার একটি অংশ। ভাগবাটোয়ারার পর কোন কোন নিয়োগের কিয়োদাংশ জমা হতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে। আবার কোন কোন নিয়োগের পুরো টাকাই হজম করতো নিয়োগ চক্র। তাছাড়া এমপি বা হুইপের পকেটের লোকদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য পদে বসিয়ে পকেট কমিটি গঠন করতে যাবতীয় সহযোগিতা করে আসছিলেন শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল। আর এসকল কাজেও তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। এছাড়া নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ছাড় করানোসহ বিভিন্ন ভাবে আদায় করা হয়েছে বাড়তি অর্থ। আর এসকল কর্মকান্ডে সহযোগিতার ক্ষেত্রে তার বিশ্বস্ত সিপাহ শালার হিসেবে কাজ করে চলেছেন তার কার্যালয়ের সহকারি আইয়ুব হোসেন। যা সঠিকভাবে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। তাছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নামে-বেনামে থাকা স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি, ব্যাংক লেনদেন, নিকট আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবের সঠিক তদন্তের দাবি উঠেছে সচেতন মহল থেকে। দুদকের মাধ্যমে তার সার্বিক তদন্তের দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক সমাজ ও সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি কেন একই উপজেলায় দুই টার্মে ১০ বছর শিক্ষা কর্মকর্তা পদে আছি তা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ জানেন। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন, অভয়নগর উপজেলায় সকল নিয়োগ কাগজপত্রে আইন মেনেই হয়েছে। নিয়মের বাইরে কোন নিয়োগ দেয়া হয়নি। এবিষয়ে
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, আমি যশোর জেলায় ১ বছর হলো এসেছি। অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুই টার্মে ১০ বছর আছেন কিনা তা আমার জানা নেই। ফাইল দেখলে বুঝতে পারবো। তবে তিনি যদি দুই টার্মে ১০ বছর থাকেন তবে সেটা সরকারি বদলী নীতিমালা বাহির্ভূত। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। নিয়োগ বাণিজ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি তো নতুন এসেছি। এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।
বার্তা প্রেরকঃ
মোঃকামাল হোসেন
বিশেষ প্রতিনিধি
Leave a Reply