মোকাররম হোসেন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে একটি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার এলুয়াড়ী, আলাদীপুর, খয়েরবাড়ী, শিবনগর ইউনিয়নে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে। ইতোমধ্যে এ রোগে প্রায় অর্ধশত গরু আক্রান্ত হয়েছে। এতে চরম আতঙ্কে পড়েছেন খারামিরা।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে আক্রান্ত গরুকে চিকিৎসা সেবাসহ খামারিদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এবং সচেতন করা হচ্ছে। সঠিক নিয়ম মেনে সাধারণ চিকিৎসাতেও এ রোগ ভালো হয়।
জানা যায়, উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের মোস্তফা কামালের ৭টি গরুর মধ্যে ১টি গরুর বাছুর ১৪ দিন ধরে আক্রান্ত। একই এলাকার শাহিন আলমের এর ১টি এঁড়ে বাছুর মারা গেছে তিন দিন আগে। এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে ওই এলাকায় প্রায় ২০টি গরু।
শিবনগর ইউনিয়নের আদর্শ কলেজ পাড়া গ্রামের জাকারিয়ার ১টি গরুর বাছুর, বিপুল শীলের ১টি, বুজরুক শমশের নগর গ্রামের মনতাজের ১টি, এলুয়াড়ী ইউনিয়নের বেজাই এলাকার আনিছুর রহমানের ১টি, এছাড়াও খিয়ার মির্জাপুর গ্রামের মমিনুল এর ২টি গরু আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়েছে আরও দুটি আক্রান্ত হয়েছে।উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২/৩ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় অর্ধশত গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে সাধারণ গৃহস্থসহ খামারিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালে উপজেলা প্রাণি সম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা খামারিদের সাথে কথা হয়। তারা বলেন, গরুর শরীর চাকাচাকা হয়ে ফুলে যাচ্ছে, লোম উঠে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে শরীরের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এসময় গরুর শরীরে প্রচন্ড জ্বর আসছে। জ্বরের সাথে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে, অনেক চেষ্টা করেও কিছু খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই আক্রান্ত গরু বাছুর নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। হাসপাতালে এসে শুধু ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন বাহির থেকে ওষুধ কিনে নিতে হচ্ছে।
ফুলবাড়ী প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় নিবদ্ধিত গরু খামার রয়েছে ৪৪টি, ছাগলের ১টি ও ভেড়ার খামার রয়েছে ১টি। অনিবন্ধিত গরুর খামার রয়েছে ২৫৭টি, ছাগলের ১১০টি, ভেড়ার খামার রয়েছে ২৪টি। সূত্র আরও জানায়, কৃষক পর্যায়ে উপজেলায় দেশি গরু রয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ১৬৩ টি। এসব খামার থেকে হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ১১৫টি পশু চিকিৎসার জন্য আসে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. রবিউল ইসলাম বলেন, ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে গবাদি পশুর ওষুধ সরবরাহ খুবই কম। যে পরিমাণ ওষুধ বরাদ্দ দেয়া হয় চাহিদা তার চেয়ে প্রায় ২০/২৫ গুণ। বছরে ২ বার এই লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগ দেখা দেয়। এটি একটি ভাইরাসজনিত মৌসুমী চর্মরোগ যা মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত ছোট বাছুর গরুর সমস্যা বেশি হয়, কারন এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। কোন গবাদি পশু এ রোগে আক্রান্ত হলে, তাকে আলাদা করে মশারির নিচে রাখতে হবে। জ্বর হলে দিনে দুই-তিন বার মাথায় পানি দিতে হবে। গুটি না ফাটা পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যাবে না। কেননা, আক্রান্ত প্রাণি এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এন্টিবায়োটিক দিলে আক্রান্ত প্রাণি মারা যেতে পারে। প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যারা গরু নিয়ে এ রোগের চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের সবধরনের পরামর্শসহ চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। কিছু নিয়ম মেনে চললে এবং চিকিৎসা নিলেই এ রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।
প্রধান কার্যালয়, মিরপুর-১৩,ঢাকা
Copyright © 2025 দৈনিক অপরাধ তল্লাশি. All rights reserved.