মো:লালন সরকার,বিশেষ প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি থেকে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই মাটি কেটে বিক্রি করছে এক শ্রেণির কৃষক। ইটভাটার কিছু মালিক প্রান্তিক কৃষকদের নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে, এদিকে নগদ টাকা পেতে অনেক কৃষক স্বেচ্ছায় মাটি বিক্রি করছেন। মাটি কেনাবেচায় আপাতত লাভবান হলেও ক্ষতির মুখে পড়ছে জমির উর্বরতা শক্তি। এছাড়া মাটি কেটে নেওয়ার ফলে জমি নিচু হয়ে পড়ায় চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধানের ফসলি জমি কেটে পুকুর করার প্রতিযোগিতা। এতে করে প্রতি বছরই ফসলি জমির পরিমাণও কমে যাচ্ছে। ফসলি জমিতে একের পর এক গড়ে ওঠা ইটভাটার ফলে ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমি। সর্বশেষ যেসব জমিতে বছরে একাধিক ফসল হয়, সে সব জমি থেকে শুরু হয়েছে ইটভাটার মাটি বিক্রি। রবিবার দিবাগত রাতে সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার দন্ডপাল ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকার মৃত নুরুল হক প্রধানের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী এম.এস.বি ব্রিক্স নামের ইটভাটায়। দিনে গুয়াগ্রাম ঘুরে দেখা যায় লাল মিয়া, নরেশ সহ আরো অনেকের ফসলি জমি থেকে এস্কাভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কালীগঞ্জের মৌমারীর আশপাশের ইট ভাটায়।সোমবার ভোর ৪ টার দিকে উপজেলার সুন্দর দিঘী ইউনিয়নের খোরার পার এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে শাহিনুর ইসলাম ও আবুলের কৃষি জমি থেকে রাতের আঁধারে এক্সকাভেটর দিয়ে কাটা হয় মাটি।
যা ড্রাম ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দণ্ডপাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জের আশেপাশের ইটভাটায়।এই সময় একটি ড্রাম ট্রাকের ড্রাইভার বলেন, আমরা পাবনা থেকে এসেছি। আমি এই এলাকার কোনো জায়গায় চিনি না। আমাদেরকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হয় আমরা সেখান থেকে মাটি নিয়ে ভাটা গুলোতে মাটি নিয়ে দিচ্ছি। আজ এমপির ভাটাতে মাটি দিচ্ছি।ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক নিয়ন্ত্রণকারী পঞ্চগড় ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়ন এর প্রধান কার্যালয় শিমুলতলী মৌমারী বাজারের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, দন্ডপাল ইউনিয়নে প্রায় ২২টি ভেকু ২০০ টি মাহিন্দ্রা ট্রাক্টর ও ১৫ টি ড্রাম ট্রাক প্রতিদিন এই ইউনিয়নের ইটভাটা গুলোতে মাটি দেওয়া হচ্ছে। আমি এগুলো দেখাশোনা করি ইট ভাটার মালিকরা আমাকে বলে যেখান থেকে মাটি আনতে আমি সেখান থেকেই মাটি নিয়ে দেই। এর বৈধতা আছে কিনা আমি কিছু জানি না এ বিষয়ে ইট ভাটার মালিকদের সাথে কথা বলতে পারেন আপনারা।মাটি বিক্রেতা দণ্ডপাল ইউনিয়নের ধনো মন্ডল গ্রামের মৃত: আলেফ আলীর ছেলে মোঃ ইউনুছ আলী বলেন,
আমার জমির চারপাশে মাটি বিক্রি করায় আমি কূলকিনারা না পেয়ে এক বিঘা জমির মাটি বিক্রি করি।
গ্রামের অনেক কৃষক বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে ফসলি জমির মাটি ইট ভাটার মালিকরা ক্রয় করেন। এক-থেকে ৩ ফুট গভীরতায় এক বিঘা জমির মাটি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করছেন তারা। অভাব অনটনের কারণে আমাদের এলাকার কৃষকরা এই জমি থেকে ইটভাটাই মাটি দিচ্ছে অনেক কৃষকরা।দেবীগঞ্জ উপজেলার ইটভাটা সমিতির সভাপতি ও ইটভাটার মালিক মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন, এক ফসলি জমির মাটি কাটার কারণে জমির ক্ষতি হয় না। সরকার আমাদের ব্যবসার স্বার্থে মাটি কাটার বিকল্প ব্যবস্থা না করলে আমরা কি করব। সবাইকে ম্যানেজ করে আমাদের চলতে হয়।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাঈম মোর্শেদ বলেন,টপ সয়েল হলো মাটির উপরের সেই অংশ যেখানে গাছপালা জন্মে অর্থাৎ মাটির উপরের উর্বর অংশই টপ সয়েল।টপ সয়েল জমির প্রাণ। জমির উপরের আট থেকে ১০ ইঞ্চিই হলো টপ সয়েল।
আর ওই অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। অনেকেই জমির টপ সয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছেন। মাটি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে তারা জমির উর্বরা শক্তিই বিক্রি করে দিচ্ছেন। জমির এ ক্ষতি ১০ বছরেও পূরণ হবে না। কৃষকদের টপ সয়েল বিক্রি থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শরীফুল আলম বলেন, ইটভাটা মালিকদের কি দোষ জমির মালিক যদি মাটি বিক্রি না করে জোর করে কি কেউ মাটি কিনতে পারে, এ বিষয়ে শিগগিরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে যারা কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন।উল্লেখ্য, দেবীগঞ্জ উপজেলায় ২২ টি ইট ভাটা রয়েছে, তারমধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে ৪ টিতে, ১৮ টি ইট ভাটার নেই কোনো ছাড়পত্র।
প্রধান কার্যালয়, মিরপুর-১৩,ঢাকা
Copyright © 2025 দৈনিক অপরাধ তল্লাশি. All rights reserved.