এসএম মাসুদ,কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
টাকার অভাবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল এন্ড এনভারমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের চান্স পাওয়ার পরেও ভর্তি হতে পারছিলেন না মেধাবী ছাত্রী তাহমিনা ইয়াছমিন। অবশেষে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ভর্তি নিশ্চিত হওয়ায় আনন্দিত দরিদ্র ছাত্রী তাহমিনা ইয়াছমিন।
বৃহস্পতিবার (১০ আগষ্ট ) বিকেলে তাহমিনা ইয়াছমিনের হাতে ভর্তির টাকা তুলে দেন কাপাসিয়ার ইউএনও।
জানা গেছে, কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের রায়েদ মধ্যেপাড়া এলাকার অসুস্থ দরিদ্র কৃষক মোঃ তাঁরা মিয়ার বড় মেয়ে তাহমিনা এবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল এনভারমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু ভর্তি হওয়ার টাকা কোনোভাবেই যোগাড় করতে পারছিলেন না তাহমিনার অসুস্থ বাবা। টানাপোড়েনের মাঝে পাঁচ সদস্যের পরিবারে দৈনন্দিন খাবার জোগাড় করাই তার পক্ষে একরকম অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, শৈশব থেকেই মেধাবী ছাত্রী তাহমিনা ইয়াছমিন প্রাইভেট-টিউশন পড়িয়ে এবং স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীদের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে উপজেলার হাইলজর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএস সি’তে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পান। পরে এইচএসসি গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। টিউশনের জমানো টাকা দিয়ে পরীক্ষা দেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায়ও উত্তীর্ণ হন তাহমিনা। ছোটবেলা থেকে ইন্জিনিয়ারিং বিভাগে উচ্চশিক্ষা নেয়ার প্রবল আগ্রহ ছিল তার। কিন্তু,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চান্স পেলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় টাকা। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আনেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
আর এরপরই তার পাশে দাঁড়িয়েছে কাপাসিয়া উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম গোলাম মোর্শেদ খাঁন তাহমিনার হাতে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা তুলে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা পাওয়ার উচ্ছ্বসিত দরিদ্র তাহমিনা ইয়াছমিন বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার প্যাশন ছিল আমি সিভিল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগে উচ্চতর ডিগ্রি নেবো। ইন্টারমিডিয়েট শেষ করেই আমি এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেই এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হই। কিন্তু কোনোভাবেই ভর্তির টাকা জোগাড় করতে পারছিলাম না। বিষয়টি আমার প্রধান শিক্ষককে জানাই,পরে ওনার পরামর্শ নিয়ে
ব্যাপারটি ইউএনও মহোদয়কে জানালে তিনি তাত্ক্ষণিকভাবে আমার ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় সব টাকার ব্যবস্থা করেন।আমার প্রতিজ্ঞা,আমি ভালোভাবে লেখা পড়া করে দেশ ও মানবতার কল্যানে কাজ করে যাবো, এ জন্য সকলের দোয়া কামনা করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম গোলাম মোর্শেদ খাঁন জানান, বিষয়টি আমি জানা মাত্রই তার ভর্তির বন্দোবস্তের উদ্যোগ নিই। ভর্তির টাকা তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন আশা করে ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠনে সে ভূমিকা রাখবে। টাকার অভাবে কারো উচ্চশিক্ষা যেনো বিঘ্নিত না হয় সেদিকে উপজেলা প্রশাসন খেয়াল রাখছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply