মোকাররম হোসেন, ফুলবাড়ী(দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
এখন শ্রাবণ মাস অর্থাৎ বর্ষাকাল। বর্ষার অঝোর ধারা ধানের জমিতে জমে চাষর উপযোগী হয় জমি। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা দাবদাহে শুকিয়ে গেছে আমন চাষের জমিতে জমে থাকা পানি। তাই চারা রোপণ নিয়ে বিপাকে আমন চাষিরা। কিছু জমিতে চারা রোপন করলেও পানি অভাবে জমি শুকিয়ে ফেটে চৌচির। বাধ্য হয়ে রোপা আমন ক্ষেত বাঁচাতে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ কার্যক্রম শুরু করেছেন কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আমন চাষিরা রাসায়নিক সার ছিটিয়ে জমি তৈরি করছেন। তবে চারা রোপণে পর্যাপ্ত পানি নেই প্রায় জমিতে। কিছু কিছু জমিতে দেখা যাচ্ছে পানি, এসব জমিতে কৃষক চারা রোপণ করছেন। আবার যে সব জমিতে পানি শুকিয়ে গেছে তারা জমি তৈরি করে বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় আছেন। কেউ কেউ জমির পাশের ডোবা-নালা থেকে শ্যালো মেশিন দ্বারা পানি সেচ দিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন চাষ মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে। এবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৭১৮ টন।
উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর গ্রামের কৃষক বলাই, নূর ইসলাম বলেন, ৮ বিঘা জমিতে আমন চাষ করছি। জমি তৈরি করেছি, দোগাছি থেকে চারা তুলছি। জমিতে চারা রোপণের লোকজনও লাগিয়েছি। তবে জমিতে পানি কম আছে, দেখি কি হয়।
শিবনগর ইউনিয়নের গোপালপুর বিহারির ডাঙ্গা গ্রামের আমন চাষি গোফ্ফার বলেন তিনি এক একর জমিতে আমন চারা রোপন করেছেন কিন্তু পানি না থাকায় জমি শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন লাগিয়ে সেচ দিচ্ছি। ওই এলাকার কৃষক মোস্তাকিম মন্ডল বলেন, এক একর ২৫ শতক জমিতে আমন লাগিয়েছি কিন্তু পানির অভাবে ফসলের ক্ষেত ফেটে চৌচির। এখন সেচ দিয়ে ফসল রক্ষার চেষ্টা করছি। পানি না দিলে আমন ফসল টেকানো কঠিন হয়ে যাবে, ফলন হবে না। তার এই ফসল লাগাতে গত ১৫ দিনে ১৬ হাজার টাকার বেশী খরচ হয়ে গেছে। ডিজেলের দাম বেশী সেচ দিতে খরচ বেশী পড়ছে। লস হলেও উপায় নেই আবাদ করতে হবে উপায় নেই।
দিনাজপুর জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন জনান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে ভাল বৃষ্টিপাত হলেও চলতি সপ্তাহে কোন বৃষ্টিপাত ছিল না। প্রতিবছর এসময় কম বেশী বৃষ্টি হয়। তবে এবার কম। প্রচন্ড গরমের কারণে যেভাবে পানি বাষ্প হয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে তাতে এমাসের শেষ দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, প্রচন্ড খরার কারণে সেচ যন্ত্র চালুর জন্য উপজেলা সেচ কমিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে আমন রোপনের এখনও যথেষ্ট সময় আছে। কারণ আমাদের এই এলাকায় সুগন্ধি ধান চাষ বেশী হয়। যা ব্রি ৩৪ জাতের। এই ধান লাগানোর যাবে ২০ আগষ্ট পর্যন্ত। তাই তেমন সমস্যা হবে না।
এদিকে উপজেলা মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে আমন ক্ষেতে সেচ কার্যক্রমের জন্য উপজেলা সকল গভীর ও অগভীর নলকূপ চালু করার জন্য প্রচার শুরু করা হয়েছে।
Leave a Reply